স্বপন কুমার
(রালিবেড়া, পুরুলিয়া)
মতিলাল পড়ে আছে ভেঁড়রা ঝোপের পাশে। সেই সময় মতিলালদের বাড়িতে
আসছে তার মামা। তার মামা দেখল কে যেন পড়ে আছে ঝোপের কাছে। তা দেখে মতির মামা, মতিদের
বাড়িতে ঢুকল। মতির বাবা শান্তিরাম বাড়িতেই ছিল। শালাকে দেখে সে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। মেয়ে
গীতাকে ডেকে শান্তি বলল, “এদিকে শোন গীতা, তোর মামা এসেছে; এক ঘটি জল দে।”
গীতা এক ঘটি জল মামাকে দিল ও খাট পেতে দিল বসতে। মামা খাটে
বসেই জামাইদাকে বলল, “ওখানে কে পড়ে আছে?”
শান্তি বলল, “মতি। তোমার সাধের ভাগনা।”
মামা আশ্চর্য হয়ে বলল – “হ্যাঁ! তার কী হয়েছে?”
শান্তি – “আর বলোনা। সেই গত সরস্বতী পূজোর থেকে যে মদ গিলছে;
এখন পুরো মাতাল। এখন তার হুঁশ নেই।”
মামা বলল – “যাও ওকে তুলে নিয়ে এসো। এভাবে কেউ পড়ে থাকতে দেয়?”
শান্তি বলল – “থাক। আর পারিনা। বিরক্ত হয়ে গেছি। নেশা কাটলেই
ঠিক চলে আসবে।”
ওর মামা তো ভেবে পাচ্ছে না। ভাগনা তো খুব ভাল ছেলে ছিল। এরকম
হল কীভাবে? তা জানার জন্যই মামার মনে আগ্রহ বেড়ে গেল। জামাইদাকে বলল – “খুলে বলতো জামাইদা!
ছেলেটা এমন হল কীভাবে?”
শান্তি বলল – “এর কান্ড শুনলে দুঃখ পাবে।” মামা তাই আরো জিদ
ধরল জানার জন্য। না, বলতেই হবে।
শান্তি বলল – “আগে চা-জল পান হোক; তারপর বলছি।”
জল পান পর্ব শেষ হল। শান্তি শালাকে যা শোনাল তা নিম্নরূপ।
গত পৌষ সংক্রান্তির পর একটু একটু শীত কমতে শুরু করেছে। ঠিক
সেই সময় মতি ও তার বন্ধুরা মিলে সরস্বতী পূজোর আয়োজন শুরু করে দিয়েছে। তখন মতি সবে
ক্লাস নাইনে উঠেছে। যত পাড়ার চ্যাংড়াদের সঙ্গে তার ওঠা-বসা। এমন সময় একদিন মতি এসে
বাবাকে বলল – “বাবা রাতে আমাদের সরস্বতী পুজার মিটিং আছে, আমাকে যেতে হবে।”
বাবা বাধা দিতে পারেনি। বলল – “যাও। তবে বেশি রাত করিস না।”
ছেলে কোন মতে দুগাল ভাত গিলে মিটিংএ চলে গেল।
গ্রামে আড্ডা দেওয়ার মাচানে আলোচনা শুরু হল। এবছর পূজো এমন
হবে, যাতে গ্রামের সবাই আশ্চর্য হয়ে যায়। পূজোর তিন দিন সবাইকে মণ্ডপে থাকতে হবে। পূজোর
পরে মঙ্গলবারে প্রতিমা বিসর্জন হবে। তাতে ডি.জে. বক্স করা হবে। খুব ধুমধামের সাথে নাচতে
নাচতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হবে। কীভাবে পূজোর খরচ জোগাড় করতে হবে তা স্থির করা হল।
চাঁদা তুলতে কে কে যাবে তা ঠিক করা হল। কত টাকা তুলতে হবে, তাও ঠিক হল। লক্ষ্য পঞ্চাশ
হাজার টাকা।
যারা চাঁদার দায়িত্বে ছিল তারা পরের দিন থেকেই রাস্তায় নেমে
পড়ল। রাস্তার উপর তারা বাঁশের ফটক তৈরি করে চাঁদা তোলার ব্যবস্থা করল। কোন গাড়িই ছাড়া
যাবে না। একটি বাইক আসছে দেখে মতি চেঁচিয়ে বলল – “দেখ! একটা মোটর সাইকেল আসছে। চাঁদা
না নিয়ে কোনমতে ছাড়া যাবে না।”
সকলে – “এই দাঁড়ান - দাঁড়ান!”
আরোহী – “কী হয়েছে?”
মতি – “সরস্বতী পূজোর চাঁদাটা দিয়ে যান।”
আরোহী – “সে তো অনেক দেরি আছে! দেব অবশ্যই দেব; তবে আজকে নয়,
পরে।”
সকলে একসাথে – “না এমন করবেন না।”
আরোহী - দেখো; আমি তো প্রতিদিন আসি।”
মতিরা দেখল তা অবশ্য সত্যি।
মতি – “এনাকে ছেড়ে দাও।”
আরোহী চলে গেলেন।
একটু পরে আবার একজন এসে পড়লেন। মতিরা তাঁকে ছাড়তে চাইছে না। সকলে – “পূজোর চাঁদাটা
দিয়ে যান।”
আরোহী – “না; দেব না। কী করবি করেনে।” মনে হয় এভাবে পথ আটকে
চাঁদা তোলাটা আরোহীর পছন্দ হয়নি। মতি দেখল, এ তো মুশকিলে পড়া গেল।
আরোহী তার বন্ধুকে মতিদের ভিডিও করতে বলল। আর নিজে মতিদের নাম
ঠিকানা জানতে চাইলেন।
এবার মতিরা ভয় পেয়ে গেল। তারা কেউ নাম ঠিকানা বলতে চাইছে না,
ভিডিও করছেন বলে।
আরোহী – “বল; ভয় কীসের? কত তোদের দম আছে তা দেখেই ছাড়ব।”
কোনো উপায় না দেখে আরোহীদের ‘সরি’ বলে যেতে বলল। কিছুক্ষণের
মধ্যে আরেকটি মোটর সাইকেল এসে দাঁড়াল। মতিরা চাঁদা চাইলে সে পাঁচ টাকা দিতে রাজি হয়।
মতিরা ২০ টাকা চায়। আরোহী ৫ টাকার বেশি দিতে রাজি নয়। অবশেষে ৫ টাকা নিয়েই তারা আরোহীকে
ছেড়ে দিল। এরপরে আরেকটা বাইক এসে পড়ল। মতিরা আন্দাজ করল, বোধহয় এরা স্বামী-স্ত্রী।
লোকটা হেসে বললেন, “কী ব্যাপার! সরস্বতী পূজো আসছে তাই?”
মোতিরা বলল – “হ্যাঁ
স্যার। চাঁদাটা দিয়ে যান।” মোতিরা ভাবল ইনি অবশ্যই কিছু দিয়ে যাবেন। ভদ্রলোক – “হ্যাঁ-হ্যাঁ
দেব, আমার নামটা লেখ তাহলেই দেব।”
মতি – “কী নাম স্যার?”
ভদ্রলোক – “ব্রঁজ্ঞাহ্মণ্য
মাহান্তা।”
মতি লিখল – ‘বঙ্গাভন
মাহান্তা’।
ভদ্রলোক – “দেখি, তোরা তো নামটাই লিখতে পারলি না। আর তোরা সরস্বতী
পূজা করবি। আগে ভালো করে লিখ।”
দু-চার বার লিখে দেখল, ঠিক হল না।
ভদ্রলোক তাই বললেন – “আমাকে এখন ছাড়। পরে যখন লিখতে পারবি,
তখন, নিবি।”
মতিরা কোনো উপায় না দেখে ছেড়ে দিল। ভদ্রলোকটিকে ছাড়ার আগে
আরেক জন এসে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনিও চাঁদা দিতে রাজি আছেন, তবে তাঁর প্রশ্নেরও উত্তর
দিতে হবে। বোধহয় তিনি মনে মনে ভাবছিলেন, কী করে ফাঁকি দেওয়া যায়?
তাঁর প্রশ্ন – “স্কুল” বানানের প্রথমে ‘ই’ নেই কেন? ছেলেরা
থতমত খেয়ে গেল। তবুও ছেলেরা
বলল
– “অতসব ছাড়ুন চাঁদাটা দিন – না।”
ভদ্রলোক – “না বলতে পারলে আমিও চাঁদা দেব না।” কোনো উপায় না
দেখে তাঁকেও ছেড়ে দিতে হল। এইভাবে সারাবেলা কেটে গেল। মাত্র ষাট টাকা হয়েছে। সবাই
নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরল।
রাত্রে তারা আবার এক জায়গায় মিলিত হল। সবাই চিন্তিত। কীভাবে
পঞ্চাশ হাজার তোলা যায়? অবশেষে সিদ্ধান্ত হল, যেখানে বড় গাড়ি চলে সেখানে গিয়ে চাঁদা
আদায় করতে হবে। তাতে মনে হয় আদায় ভালো হবে।
কথামতো অনেকেই পরের দিন রাস্তায় নামল। এরমধ্যে একটি ট্রাকটর
বালি নিয়ে যাচ্ছিল। তারা গাড়ি আটকাল। তারা ড্রাইভারকে বলল সরস্বতী পূজার চাঁদাটা দিতে।
ড্রাইভার বলল – “দেখ, আমার কাছে পয়সাপাতি নাই।”
ছেলেরা – “না! কিছু দিতেই হবে। নাহলে ছাড়া যাবে না।”
ড্রাইভার – “দেখ, আমার কাছে বালি ছাড়া কিছুই নাই।”
মতি – “বালিই দাও।”
ড্রাইভার – “নাও, একধামা নামিয়ে দিচ্ছি।”
মতি – “ওকে, ঠিক আছে।”
একধামা বালি নামিয়ে দিয়ে ড্রাইভার চলে গেল। একটি ছেলে বলে
উঠল – “বালি নিয়ে কী হবে?”
মতি – “হবে; যখন এইভাবে এক ট্রাকটর বালি হবে, তখন বিক্রি করে
দেব।”
এবার একটি ধান বোঝাই লরি এসে পড়ল। সবাই ঘিরে ধরল। চাঁদা দিতেই
হবে। ড্রাইভার একশো টাকা দিতে রাজি হল। এরা বেশি চাইল। এর মধ্যেই সুবোধের মাথায় একটা
বুদ্ধি খেলে গেল।
সুবোধ বলল – “না, একশো টাকায় হবে না। পাঁচশো দিতে হবে। দেখছেন
না এই রোডে দশ টনের বেশি মাল বহন নিষিদ্ধ।”
অনেক কথা কাটা-কাটির পর ড্রাইভার পাঁচশো টাকা দিতে বাধ্য হল।
সবার মুখে হাসির ছাপ। এই সময় একটি সুমো এসে পড়ল। চাঁদা চাইলে সুমোর ড্রাইভার বলল
– “গাড়িতে সিরিয়াস প্যাসেন্ট আছে। ছেড়ে দাও।”
অবস্থা বুঝে ছেলেরা তর্ক না করে ছেড়ে দিল। সন্ধ্যা প্রায় নেমে
এল, তাই সেদিনের মতো সবাই বাড়ি ফিরল। সারাদিনে হাজার খানেক টাকা আদায় হল। এর মধ্যেই
মদন এসে পড়ল। সে জানতে চাইল, “আজ কত টাকা উঠল?”
মতি বলল – “হাজার খানেক।”
মদন – “ঠিক আছে। আজ রাত্রে সবাই আসবি। কিছু আলোচনা আছে।”
রাত্রে আবার সবাই মিলিত হল। মদন সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল –
“দেখ, গ্রামের সবাই জেনে গেছে, এবছর পূজো ধূমধাম করে হবে। তাই পিছোলে হবে না। কিছু
একটা করতেই হবে।”
সবাই চুপ। কী করা যায়? হঠাৎ মদনের মাথায় একটা বুদ্ধি এল। সে
প্রস্তাব করল, “হাই ওয়েতে অনেক গাড়ি যায়, সেখানে চাঁদা আদায় করলে ভালো হবে।”
সবাই সম্মতি দিল।
ঠিক পরের দিন হাইওয়েতে চাঁদা আদায় করতে সবাই দাঁড়িয়ে পড়ল।
হাইওয়েতে হাত দিলেও গাড়ি দাঁড়াচ্ছে না। রসিদ বই দেখেই হর্ন বাজিয়ে দ্রুত গতিতে পার
হয়ে যাচ্ছে। তাই মতি একটা বুদ্ধি খাটাল। পাকা সড়কের উপর নিজের সাইকেলটা দাঁড় করিয়ে
দিল। সেই সময় একটি ট্রাক আসছিল, সবাই চিৎকার করে বলতে লাগল – “দাঁড়ান; দাঁড়ান।”
ড্রাইভার হর্ন বাজিয়ে সাইকেলটিকে পাশ কাটিয়ে গাড়ি নিয়ে যাবার
চেষ্টা করল। তাতেই ঘটল বিপত্তি! পাশ কাটাতে গিয়ে ট্রাকের পিছনের চাকা সাইকেলের উপর
দিয়ে চলে গেল। ড্রাইভার দেখছে এরা অনেকজন আছে তাই আর দাঁড়ালো না।
মতি ভয় পেয়ে বলল – “মদনদা, এখানে হবে না। চলো বাড়ি যাই। মা
বকবে, সাইকেলটাও দুমড়ে গেছে। মাকে কি বলবো?”
বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্তই সবাই গ্রহণ করল।
মতি বলল – “সাইকেলটা?”
মদন বলল – “চল, এখন বাড়ি যাই।”
তারপর সবাই চাঁদাতুলে সাইকেলটা সারিয়ে দিল।
এরপর সবাই রাত্রে মিলিত হল। আজও সবাই চুপ। কী করা যায়?
মদন নীরবতা ভেঙে বলল – “হাইওয়েতে আর চাঁদা তোলা যাবে না। কখন
কী ঘটে যাবে বলা মুশকিল। কিছু একটা উপায় বার করতে হবে। গ্রামে চাঁদা তুললে কেমন হয়?
কিন্তু এত টাকা উঠবে কী?”
মতি বলল – “দাদা; নদীতে জল কমেছে ও চুনা মাছ প্রচুর হয়েছে,
ধরে বিক্রি করলে কেমন হয়?”
মদন তার কথায় সায় দিয়ে বলল – “এছাড়াও আরো কিছু করতে হবে।”
সুবোধ বলল – “এখনো অনেকের ধান ঝাড়া হয়নি। যদি আমরা ঝেড়ে দিই,
তাহলে অনেক টাকা আসবে।”
মদন বলল – “ওসব ঠিক আছে। তবে যদি আমরা চেন্নাইয়ে কাজ করতে যাওয়া
ছেলেদেরকে ডাকি তাহলে তাদের কাছে একটা মোটা টাকা পাওয়া যাবে ও সবাই মিলে বেশ মজা হবে।”
কথামত পরের দিন সকালে কাঁসাই নদীতে অনেকে মাছ ধরতে গেল। কেজি
সাতেক মাছ পাওয়া গেল। দুজন মাছ বিক্রি করতে বাজারে গেল। আর বাকিরা খাওয়া-দাওয়া সেরে
রাখালদের বাড়িতে ধান ঝাড়তে শুরু করল। মাছ বিক্রি করে হাজার খানেক ও ধান ঝাড়াই করে
হাজার তিনেক টাকা আয় হল।
রোজগার মন্দ নয়, কিন্তু সবার স্কুল কামাই হতে লাগল। অনেকের
মা-বাবা তাদেরকে বকতে শুরু করল। অনেকে বলতে লাগল তোদেরকে আর সরস্বতী পূজা করতে হবে
না। ভাল করে পড়াশুনা কর। সারাদিন খেটে সবার গা-হাত-পা ব্যাথা করতে শুরু করল। তার উপর
বাড়িতে মা-বাবার বকুনি। তাই অনেকে আবার স্কুল যেতে শুরু করল। সাথে-সাথে রোজগারের পথও
বন্ধ হয়ে গেল।
মতির মা, মতিকেও বকতে শুরু করল কিন্তু তার বাবা মতিকে কিছুই
বলল না। উল্টে মতির মাকেই বকতে লাগল। “ছেড়ে দাও না, কদিনের তো ব্যাপার। তাছাড়া, এতে
মতির একটা শিক্ষা হবে যে, পড়াশুনা থেকে রোজগার করা কত কঠিন? মতি, তা - হাড়ে হাড়ে টের
পাবে।”
মতির মা ভেবে দেখল, কথাটা মন্দ নয়। তাই চুপ করে গেল।
দিন কতক পর মদন আবার সবাইকে রাত্রে ডেকে আলোচনা শুরু করল –
“দেখো পূজো সামনে চলে এল, এরপর শুরু না করলে আর পারা যাবে না। আমাদের যদি পঞ্চাশ হাজার
নাও হয়, কিছু কাট-ছাঁট করে তিরিশ হাজারেও ভালোভাবে করা যাবে। তবে মনে রাখতে হবে, এই
তিরিশ হাজার টাকা কিন্তু ওঠাতেই হবে। এর মধ্যে বালি বিক্রি করে চার হাজার পাওয়া গেছে।
সব মিলিয়ে এদিক-ওদিক করে প্রায় দশ হাজার হয়ে গেছে। তাহলে আর কত বাকি থাকল? কুড়ি হাজার।
এর মধ্যে দশ হাজার বাইরে কাজ করতে যাওয়া ছেলেদের কাছে পাওয়া যাবে। আমি ফোন করে দিয়েছি।
তাহলে বাকি থাকছে আর দশ হাজার। এই দশ হাজার আমরা জোগাড় করতে পারব না?”
সবার মনে একটা আশার আলো ফুটে ওঠল।
মতি বলল – “তাহলে পূজোটা ভালোভাবেই হবে।”
মদন – “অবশ্যই। তবে এই দশ হাজার টাকা সবাইকে দায়িত্ব নিয়ে ওঠাতে
হবে। বাকি টাকাটা আমরা যদি পাঁচশো করে দিই, তাহলেই হয়ে যাবে।”
মতির উপরও ধার্য হল পাঁচশো টাকা। মতি বাড়িতে এসে বাবাকে বলল
– “পূজোর চাঁদা পাঁচশো
টাকা
দিতে হবে।”
তার বাবা দিতে অস্বীকার করল। মতিও জিদ ধরে বসল।
মতি – “তাহলে আমিও আর স্কুল যাব না।”
মতির বাবা – “যেতে হবে না। চল আমার সাথে কাজ করবি।”
মতি দেখল মহা মুশকিল। সে সবার সামনে বলেছে, “আমিও পাঁচশো টাকা
দেব।”
মতি তাই ভেবে আলাদা ফন্দি এঁটে বলল টাকাটা না দিলে, আমি খাবার
খাব না।” অনেক বোঝানোর পরেও মতি খাবার মুখে দিল না।
উপায় না দেখে মতির বাবা মতিকে টাকাটা দিয়ে দিল।
ওদিকে আবার সুবোধের বাবা টাকা দিতে নারাজ। সুবোধের বাবার কথা
– “যা; যা পারবি কর। আমি দেব না।”
তখন সুবোধ কথাটা মদনদাকে বলল। মদন কয়েকজনকে নিয়ে সুবোধের বাবার
কাছে এল আর বুঝিয়ে-সুঝিয়ে টাকাটা দিতে বলল।
সুবোধের বাবা বলল – “না, দিতে পারব না। পাঁচশো টাকা অনেক।”
মদন বলল – “দেখুন বিবেচনা করে, আমরা মোড় থেকে চা খেয়ে আসছি।”
সুবোধের বাবা ভাবতে লাগল কী করা যায়? মদনের কাজ কারবার, সুবোধের
বাবা অনেকবার দেখেছে। ওর সঙ্গে ঝামেলা না করায় ভাল। তাই সে সুবোধের মায়ের সঙ্গে আলোচনা
করে টাকাটা দিতে রাজি হল।
তবুও দু’হাজার টাকার ঘাটতি হল। তাই মদন প্রস্তাব দিল – “এই
দু’হাজার টাকা গ্রামের প্রাইমারি স্কুলের দুজন শিক্ষক আছে, তাদের কাছে নিতে হবে। তাই
তারা প্রাইমারি স্কুলে গেল এবং তাদের কাছে দু’হাজার টাকা চাঁদা চাইল। প্রথমে তারা দিতে
রাজি হননি কিন্তু মদন যখন বলল – “না দিলে স্কুলে তালা পড়বে।” তখন দু’জন শিক্ষকেই দেখলেন,
নিজেদের কিছু গাফিলতি আছে। তাই তারা বাধ্য হয়ে টাকাটা দিয়ে দিলেন।
ইতিমধ্যে চেন্নাই-গুজরাটে কাজ করতে যাওয়া ছেলেরা এসে পড়ল। সেই
রাত থেকেই প্যান্ডেলের কাজ শুরু হল। বাজার করতে যাওয়া ছেলেরাও বাজার করে নিয়ে এল। পাশের
গ্রাম থেকে প্রতিমাও আনা হল। প্যান্ডেলের কাজ শেষ করে সবাই খেতে গেল। খাওয়া-দাওয়া সেরে
আবার অনেকে ফিরে এল রাত্রিতে থাকার জন্য। কালকে সকাল ন’টার মধ্যে পূজো শুরু হবে।
কয়েকজন প্রতিমার আশপাশটা সাজাতে শুরু করল। বাকি কয়েকজন তাস
খেলতে শুরু করল। মতি কাছেই বসে ছিল। সে তাস খেলতে জানে না। তাই সুবোধ মতিকে তাসগুলো
চিনিয়ে দিতে লাগল। 29, কলব্রিজ, ফিস প্রভৃতি কীভাবে খেলতে হয় তা বোঝাতে লাগল। প্রথমদিকে
মতির অসুবিধা হলেও পরে শিখে গেল। এভাবে চলতে চলতে কখন যে রাত দু’টা বাজল, বোঝায় গেল
না। তাই সকলে শুয়ে পড়ল।
সকালে সাউন্ড বক্সে গান বাজতেই সবার ঘুম ভেঙে গেল। শুরু হল
পূজোর প্রস্তুতি। কেউ কেউ ফুল তুলতে গেল। মেয়েরা পূজো মন্ডপের চারপাশে ভালো করে গোবর
জল দিয়ে ঝাট দিয়ে দিল। সুন্দর করে আলপনা এঁকে সাজিয়ে দিল। সকাল আটটায় পুরোহিত আসার
কথা। তাই সবাই স্নান সেরে পুষ্পাঞ্জলী দিতে হাজির। পূজারী ঠাকুর চলে এসেছেন। পূজো শুরু
হল। হোম-আরতী-যজ্ঞ সবই হল। সবাই পুষ্পাঞ্জলী দিল। তারপর প্রসাদ নিয়ে যে-যার বাড়ি ফিরল।
মতিরা কয়েকজন থেকে গেল প্রসাদ বিতরণ ও দেখভালের জন্য। কচিকাচারা সাউন্ড বক্সের গানের
তালে নাচতে লাগল। বেশ একটা উৎসবের মেজাজ।
রাত্রে মণ্ডপে থাকার জন্য চেন্নাই-গুজরাটে, কাজ করা বন্ধুরা
সহ অনেকেই এল। বাইরে খাটতে যাওয়া বন্ধুরা সদ্য এসেছে, তাই তাদের হাতে অনেক টাকা। তাছাড়া
খৈনি, বিড়ি, গুটখা ইত্যাদি সবসময় পকেট ভর্তি।
বাইরে সাউন্ডবক্সে মন মাতানো গান, আলোর ঝিকিমিকি আর ভেতরে ধূপের
গন্ধ যেন একটা অদ্ভুত আমেজ তৈরি করেছে। অনেকেই তাস খেলতে বসে গেল। আজ মতিও খেলছে। এর
মধ্যেই কেউ বিড়ি টানছে, কেউ খৈনী খাচ্ছে আবার কেউ গুটখা চিবোচ্ছে।
মতির কিন্তু বিড়ির ধোঁয়া সহ্য হল না। তাই সে বিরক্ত হয়ে বলল
– “দাদা বিড়িটা অন্ততঃ বাইরে টেনে এসো।”
প্রকাশ বলল – “লে একটা বিড়ি টান, দু’টান দিলেই মেজাজ চাঙ্গা
হয়ে যাবে।”
মতি অন্তর থেকে না চাইলেও কিছু একটা ভেবে বিড়িটা ধরাল। কয়েক
টান •দিয়ে ভালো না লাগায়
ফেলে দিল। কিছুক্ষণ পর তার একটা অনুভূতি হল, মনে হল শরীরে কিসের যেন একটা অভাব। তাই
এক গ্লাস জল পান করল। তাতেও অজানা অভাব বোধটা গেল না। তাই একটা বিড়ি আবার ধরাল এবং
খেলায় মন দিল। ক্রমশ রাত বাড়তে বাড়তে অনেকে অবসন্ন বোধ করল। তাই সবাই খেলা বন্ধ করে
শুয়ে পড়ল।
দ্বিতীয় রাতও এভাবে পার হয়ে গেল। ঘোর বিপত্তি শুরু হল তৃতীয়
রাত্রে। প্রকাশ তার বন্ধুকে নিয়ে দু’বোতল মদ এনে সরস্বতী প্রতিমার পিছনে লুকিয়ে রাখল।
যখন রাত্রি বার’টা বাজল, সারা গ্রাম নিঃশব্দ; কেবল বক্সখানা
কম আওয়াজে বাজছে, তখন প্রকাশ বলল – “আজ জমে যাবে, কেউ কোনো আওয়াজ করো না। আমি দু’বোতল
মদ এনেছি। সবাই একটু একটু পান করবো আর মজা করে তাস খেলবো।”
অনেকে আপত্তি করল – “এখানে ওসব করা যাবে না।”
প্রকাশ বলল – “খৈনী-বিড়ি সব চলল আর এতেই আপত্তি! মনের ভক্তিটাই
আসল, বুজলে। তাছাড়া আমরা তো বেশি করে খাচ্ছি না। সবাই ভাগ করলে মাত্র এককাপ করে হবে।
তাতে কারো নেশা হবে না।”
অনেকের ধারনাও তাই, ‘এক কাপে কিছুই হবে না’। তাছাড়া মজা করার
এমন সময় আর হয় না। বতর গেলে বছর যায়। তাই ‘জাস্ট একটু মজা’ করার জন্য সবাই পান করল।
তাস খেলা বন্ধ হয়ে গেল। সবাই নিজের নিজের বর্ণনা বেশি করে করতে লাগল। প্রকাশ দেখল অনেকের
একটু একটু নেশা লেগেছে। তাই সবাইকে শুতে বলল। শুরু হল ‘গুডনাইট’ বলার ধুম। প্রকাশ ওদেরকে
ভয় খাইয়ে দিল – “গ্রামের কেউ যদি আসে তো, সবার মুশকিল হবে।”
ধীরে ধীরে সবাই শান্ত হয়ে শুয়ে পড়ল। সকালে
মদন এসে সবার ঘুম ভাঙাল। হটাৎ তার নজর পড়ল, প্রতিমার দিকে এবং বলল – “হ্যা রে ঘটের
নারকেলটা দেখছি না, কে নিয়ে গেল?”
সবাই নিরুত্তর। তাই মদনও চুপ করে গেল। সে
হয়তো ব্যাপারটা আঁচ করতে পেরেছে।
আজ মঙ্গলবার, আজকের সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন
হবে। তাই সবাই তোড়-জোড় শুরু করে দিল। ডি.জে-র মালিককে ফোন করা হল, যাতে সে যথা সময়ে
ডি.জে. সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে আসে। এদিকে মদন প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষ্যে সিদ্ধি-ভাঙ এর
ব্যবস্থা করল। যাতে সবাই খুব আনন্দ করতে পারে।
সন্ধ্যা নামতেই কাউকে স্বেচ্ছায়, কাউকে বুঝিয়ে সিদ্ধি বা
ভাঙ খাওয়ানো হল। সবার মধ্যে যেন, একটা নেশাচ্ছন্ন ভাব। আনন্দ-ফুর্তি চরমে উঠল। ডি.জে.
আসতেই প্রতিমা গাড়িতে চাপানো হল বিসর্জনের জন্য। তার আগে আগে ডি.জে. গাড়ি ও উদ্দাম
নাচ করতে থাকা চ্যাংড়ার দল। গ্রামের প্রায় সমস্ত মানুষ বিসর্জন দেখতে বেরোল। কোলের
সন্তানও বাদ গেল না। কে কার কথা শোনে? ডি.জে-র কান ফাটা শব্দে কারো কথা শোনাও সম্ভব
নয়। এই বিকট শব্দে নাচতে নাচতে বিসর্জনের গাড়িও এগিয়ে চলল। মতিও ভাঙ খেয়ে উন্মাদের
মতো নাচতে লাগল। মেয়েরা পিছনে উলুধ্বনি দিতে লাগল। কেউ কেউ নাচতেও লেগে গেছে। সঙ্গে
জয়ধ্বনি - জয় মা সরস্বতী কী? – জয়, আসছে বছর আবার হবে। এভাবে এগোতে এগোতে রাস্তায় কেউ
পড়ে থাকল, আবার অনেকে টলতে টলতে প্রতিমা বিসর্জনের ঘাটে পৌঁছাল। প্রতিমা ধীরে ধীরে
জলের মধ্যে জয়ধ্বনির সাথে বিসর্জন হল। এর সঙ্গে কার কত কী যে বিসর্জন হল তার হিসাব
কে রাখে। সে যাক, এবার যে যার বাড়ি ফিরল। এবছরের মতো সরস্বতী পূজো শেষ হল।
সপ্তাহ দুয়েক কেটে গেছে। হঠাৎ একদিন মতির মা মতির বাবাকে বলল
– “তুমি দেখেছ? মতি কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে।”
মতির বাবা - হ্যাঁ দেখেছি। তার কাজেও বিশেষ মন নেই। আগে খাবার
চেয়ে নিত। এখন না ডাকলে আসে না। কী যে হল?”
হঠাৎ এক রবিবার মতি বলল – “বাবা আমি আজ তালতলের হাট যাব।”
মতির বাবা – “কেন? কী নিবি?”
মতি বলল – “এমনি যাব।”
মতির বাবা দেখল যাক, এমনিতেই মন খারাপ একটু ঘুরে আসুক, তাতে
হয়তো তার মনটা ভালো হবে।”
তাই তার বাবা বলল
– “যা, যখন মন চাইছে।”
হাটে গিয়ে মতি বন্ধুদের সাথে মদ ও শূকর মাংস ভাজা খেয়ে বেশ
চাঙগা হল। মতির মনে এক চিন্তা ঘিরে ধরল। এবার যদি বাড়ি যাই তো বাবা জেনে যাবে ‘মতি
মদ্যপান করেছে’। তাই মতি বন্ধুদের বলল – “বাড়ি গেলে তো বাবা টের পেয়ে যাবে।”
এক বন্ধু বলল – “কোনো চিন্তা নাই, এর ব্যবস্থা আছে। নে, একটা
গুটখা চিবা; তাতে কেউ বুঝতে পারবে না।”
মতি একটা দোষ চাপা দিতে আরেকটা দোষ করে বসল। তাছাড়া আর উপায়ও
নেই। বাড়িতে এসেই মতি শুয়ে পড়ল। যাতে কেউ টের না পায়।
এইভাবে প্রতি রবিবার তালতলের হাট যাওয়া মতির রুটিন হয়ে দাঁড়াল।
হঠাৎ এক রবিবার তাদের ‘মদ্যপান’ একটু বেশিই হয়েছিল। তাতে মতি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে যায়।
অনেকে তাকে চিনতে পারল। তাই মতির বন্ধুরা নেশা কাটানোর জন্য মাথায় জল দিতে লাগল। কিছুক্ষণ
পর মতির হুঁশ এল। ভয়ে মতি আর বাড়ি যেতে চাইছে না। এর মধ্যেই কে মতির বাবাকে ফোন করে
দিয়েছে, মতি তালতলের হাটে ‘মদ্যপান’ করে মাতাল হয়ে পড়ে আছে। ‘সত্যকে চাপা দেওয়া যায়
না’ - তা মতি বুঝতে পারল।
অবশেষে একজন সাইকেলে চাপিয়ে মতিকে বাড়ি পৌঁছে দিল। শান্তি
তো ক্ষেপে ছিলই। আগে পিছে না ভেবে গরু বাগালের চাবুকটা নিয়ে মতিকে কয়েক ঘা দিতেই মতির
মা তার বাবার হাত থেকে চাবুকটা কেড়ে নিল আর বলল – “এতো বড়ো ছেলেকে কেউ মারে। কখন কী
করে বসবে বলা যায় না।” তা শুনে মতি যেন একটু আশার আলো দেখতে পেল। মতি ভাবল – ‘যাক তাহলে
বাঁচা গেল’।
শান্তিপূর্ণভাবে কিছুদিন কেটে গেল। মদ যে মতিকে খেয়ে ফেলেছে,
তার প্রমাণ - মতি আরো সুযোগ খুঁজতে লাগল। কীভাবে তালতলের হাট যাওয়া যায়? বাবা তো আর
যেতে দেবে না।
এবার মতির তালতলের হাট যাওয়া বন্ধ হল। তাই সে মাঝে মধ্যে অন্য
গ্রাম থেকে মদ আনিয়ে মদ্যপান চালাতে লাগল খুব সতর্কভাবে। সাথে গুটখা চিবানোটা অভ্যাসে
পরিণত হয়েছে।
মতি ও তার বন্ধুরা মাঝে মধ্যে স্কুল যেতে লাগল। পকেটে গুটখা,
তাই তারা ক্লাসের পিছনের বেঞ্চে কোনার দিকে বসত। যাতে করে গুটখার পিক ফেলতে সুবিধা
হয়। একদিন এক শিক্ষকের নজরে পড়ল গুটখার পিক ফেলে ক্লাস রুমের কোনাগুলো নোংরা করে ফেলেছে।
সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বসা ছেলেদের উঠিয়ে বললেন – “কে কে ওখানে গুটখার পিক ফেলেছো?”
তারা কোনো কথায় বলল না। কারণ, মুখে তারা গুটখা পুরে রেখেছে।
মাস্টার মশায় একটা বুদ্ধি খাটালেন – “কী করা যায়? কী করলে ছেলেরা ক্লাসে আর গুটখা
খাবে না ও পিক ফেলবে না।” তাই মাস্টার মশায় বললেন – “তোমরা এসো, মিড-ডে-মিলের ওখান
থেকে বালতিতে জল ও সাবান গুঁড়ি নিয়ে এসো, আর নোংরা জায়গাটা পরিষ্কার করো।”
তাদের পিছনে মাস্টার মশাইও যেতে লাগলেন। হঠাৎ মতি ও তার বন্ধু
শিবু সিড়িতে না নেমে বারান্দার উলটো দিকে দৌড় দিয়ে এক ছাদের উপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে
গেল। মাস্টার মশাই দেখলেন – “এ তো মহা মুশকিল! তাদের পা ভাঙলে কী হতো?”
তাই মাস্টার মশাই সঙ্গে সঙ্গে হেড মাস্টারকে খবর দিলেন। তিনিও
ছেলেদের দুর্বুদ্ধি শুনে হতভম্ব হয়ে গেলেন। অতি সত্ত্বর অভিভাবকদের ডাকলেন। মতির বাবা
এল কিন্তু শিবুর বাবা চেন্নাইয়ে কাজে যাওয়ার জন্য আসতে পারল না। মতির বাবা সব শুনে
হেডস্যারকে বলেই দিল – “মতিকে যেভাবে হোক, দরকার হলে ঠেঙিয়ে পা ভেঙে দিন, তবুও তাকে
ঠিক রাস্তায় নিয়ে আসুন। আমি কিচ্ছু বলব না। আপনার হাতেই সব ছেড়ে দিলাম।”
হেডস্যারের তথা শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হাত বাঁধা। কোনো অপ্রীতিকর
ঘটনা ঘটলে, তার কৈফিয়ৎ কে দেবে? সমাজের অধিকাংশ মানুষ তথা প্রশাসন কাদের পক্ষে দাঁড়াবে?
তাই তিনি যে ঔষুধে কাজ হবে না, তবুও সেই ঔষুধটাই দিলেন – ‘একটু জ্ঞান দিয়ে দু’জনকেই
ছেড়ে দিলেন’।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আপসোস কি-বা, করা যায়? সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা
নীরব দর্শক মাত্র।
নানা বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে বছর খানেক পার হল। হটাৎ একদিন চেন্নাইয়ে
কাজ করতে যাওয়া জনা-কয়েক বন্ধু গ্রামে ফিরল। তারা মতির সাথে ঘুরতে গেল। সেখানে খুব
জমিয়ে মদ পান করল। মতি তো প্রায় বেহুঁশ। তাই তার বন্ধুরা মতিকে, মতির ঘরের কাছে পৌঁছে
দিয়ে পালিয়ে গেল।
মতির বাবা দুপুরের খাবার খেয়ে হাত ধুতে বাইরে বেরোতেই দেখতে
পেল মতি ঝোপের কাছে পড়ে আছে। তা দেখে সে আর মতিকে তুলতেও গেল না। এমন সময়েই মতির মামা
এসে এই দৃশ্যটা দেখতে পায়। কথা শোনাতে শোনাতে শান্তির চোখে জল গড়িয়ে পড়ল। অশ্রুসিক্ত
হয়ে সে শালাকে বলল – “আজ শান্তির ঘরে, শান্তি বিসর্জনের সাথে মতিও ঘনান্ধকারে ডুবে
গেছে।”
মতির মামা অশোকও তা শুনে নির্বাক। তবুও অশোক সাধের ভাগনাকে ঘরে তুলে কয়েক বালতি জল মাথায় ঢেলে দিল। তাতেই মতির চেতনা ফিরল।
ধীরে ধীরে মতি, গ্রামে মাতাল বলেই পরিচিতি লাভ করল এবং অদ্ভুত এক উপাধি পেল – ‘মাতলা’। মাতলা বলেই গ্রামে তাকে ডাকা শুরু হল। যখন মতিকে গ্রামের লোক মাতলা বলে ডাকে, তখন রাগে শান্তির চোখ লাল হয়ে ওঠে। কারোর সাথে মতির নিয়ে কথা উঠলে বলে – “তোমাদের মতির যেন, আমার মতির মতো দশা না হয়।”
সমাপ্ত







খুব সুন্দর ভাবে প্রকাশ করেছো।
ReplyDelete